বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি একটি গোলাম ক্রয় করল । গোলাম তাকে বললো, হে আমার মনিব! আপনার নিকট আমি তিনটি আবেদন পেশ করতে চাই(১) নামাযের সময় এসে গেলে আপনি আমাকে তা থেকে বাধা দেবেন না ।
(২) আপনি আমার দ্বারা খিদমত গ্রহণ করবেন দিনের বেলায়, রাতে আমাকে আপনার খিদমতে ব্যস্ত রাখবেন না ।
(৩) আপনি আমার জন্য একটি ঘর নির্দিষ্ট করে দেবেন । তাতে আমি ছাড়া কেউ প্রবেশ করবে না । মালিক বললো, তোমার শর্তাবলি মঞ্জুর । (মনিব কতকগুলো ঘরের দিকে ইশারা করে বললো) তুমি এ ঘরগুলো দেখো ।(কোনটা তোমার মছন্দমতো ।) তখন গোলাম ঘরগুলোর চার পার্শ্বে প্রদক্ষিণ করলো । এক পর্যায়ে সে একটি পতিত ঘর দেখে সেটাই পছন্দ করলো ।
মনিব তাকে বললেন, তুমি এ জনমানবহীন পতিত ঘরটিকে পছন্দ করলে কেন? সে উত্তরে বললো, হে আমার মনিব! আপনি কি জানেন না, জনমানবহীন ঘরও আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে সজীবতা লাভ করে এবং তা মনোরম উদ্যানে পরিণত হয়? গোলামটি উক্ত ঘরে রাত যাপন করতে লাগলো, এক রাতে তার মনিব বিনোদন ও সূরা পানের আসর জমালেন । যখন রাত দ্বিপ্রহর হলো এবং তার সঙ্গী সাথীগণ যার যার গন্তব্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলো তখন তিনি উঠে বাড়িতে পায়চারী করতে লাগলেন । এক সময় তিনি গোলামের কক্ষের সামনে এসে দাঁড়ালে হঠাৎ তিনি লক্ষ্য করলেন তার কক্ষে একটি নূরের ঝাড়বাতি আকাশ থেকে ঝুলছে । আর গোলামটি সেজদায় লুটিয়ে পড়ে স্বীয় প্রতিপালকের সমীপে কেঁদে কেঁদে আবেদন নিবেদন জানাচ্ছে । সে বলছে- হে আমার প্রভু! তুমি দিনের বেলায় আমার উপর আমার মনিবের সেবা ওয়াজিব করেছো । যদি তা না হতো তাহলে দিবা-নিশি আমি তোমারই ইবাদতে মগ্ন থাকতাম । কাজেই প্রভু হে! তুমি আমার অপারগতা ও অক্ষমতা কবুল করো । তার মনিব তার দিকে তাকিয়েই থাকলেন এক সময় সুবহে সাদিক উদয় হয়ে গেলো । তখন ঝাড়বাতিটি (আকাশের দিকে) উঠে গেলো । আর ছাদ বন্ধ হয়ে গেলো ।
তারপর মনিব তার কক্ষের সম্মুখ থেকে চলে আসলেন । তিনি তার স্ত্রীকে এ বিষয়ে অবহিত করলেন । যখন পরবর্তী রাত আসলো মনিব তার স্ত্রীসহ গোলামের কক্ষের সামনে এসে দাঁড়ালে দেখলেন । ঝাড়বাতিটি ঝুলছে আর গোলামটি সুবহে সাদিক উদয় হওয়া পর্যন্ত সাজদা ও মোনাজাতে রত রয়েছে । এরপর তারা উভয়ে গোলামকে ডেকে বললেন আল্লাহর ওয়াস্তে আমরা তোমাকে মুক্ত করলাম । ফলে তুমি যে সত্তার কাছে ওজর আপত্তি পেশ করছিলে তাঁর ইবাদতের জন্যে অপসর হয়ে গেলে । এরপর তারা আল্লাহর কাছে তার যে কারামত ও বু্যুর্গি প্রত্যক্ষ করেছেন সে সম্পর্কে অবহিত করলেন । একথা শ্রবণে গোলাম তার উভয় হাত উত্তোলন করে বললো- হে আমার প্রভু! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করেছিলাম যে, তুমি আমার গোপন তত্ত্ব কারো কাছে প্রকাশ করবে না এবং আমার অবস্থা কখনো ফাস করবে না । তুমি যখন তা প্রকাশ করে দিয়েছো কাজেই তুমি আমাকে তোমার কাছে উঠিয়ে নাও । এরপরই সে মৃত্যুর কোলে লুটিয়ে পড়লো । আল্লাহ তা’আলা তার উপর করুণা করুন!

0 মন্তব্যসমূহ