ইসলামে যাকাতের অবস্থান
যাকাত ইসলামের পাঁচটি রোকনের একটি রোকন । নামাযের পরেই যাকাতের স্থান । ২ য় হিজরীতে রোজার বিধানের পূর্বে যাকাতের বিধান নাযিল হয় এবং প্রত্যেক আযাদ মুসলমান, জ্ঞানী, প্রাপ্ত বয়স্ক, যাকাত সম্পর্কে অবগত ব্যক্তিবর্গের উপর যাকাত ফরয করা হয় । উপরন্তু রাসূল সা . যাকাত প্রদানের উপর সাহাবাদের থেকে বাইয়াত গ্রহণ করেন এবং যাকাত আদায়ের জন্য কিছু লোকও নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন ।
অপরদিকে রাসূল সা. এর ওফাতের পর যাকাত আদায়ে যারা অস্বীকার করে তাদের বিরুদ্ধে ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর রা. সুস্পষ্ট যুদ্ধ ঘোষণা করেন ।
যাকাত ফরয হওয়ার প্রধান কারণ
১. ঋণমুক্ত নেসাবের মালিকের উপর চন্দ্রবর্ষ হিসেবে পূর্ণ এক বছর অতিক্রম করা । উল্লেখ্য যে , ঋণ দ্বারা ঐ ঋণ উদ্দেশ্য যা পরিশোধ করার জন্য পাওনাদারের পক্ষ থেকে তাগাদা দেয়া হয় । এর মধ্যে আল্লাহর পাওনাও অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ বিগত বছরের অনাদায়ী যাকাত আদায় করে নতুন নেসাবভুক্ত হওয়ার পূর্বে তার উপর পুনরায় যাকাত আসবে না।
২. উপরন্তু নেসাবভুক্ত এই মাল যাকাত প্রদানকারীর মৌলিক প্রয়োজন থেকে অতিরিক্ত হতে হবে । আর একজন মানুষ বেঁচে থাকার জন্য যা কিছুর মুখাপেক্ষী হয় যেমন, পানীয়, বস্ত্র, বাসস্থান হলো মানুষের মৌলিক প্রয়োজন ।
যাকাত প্রদানের নিয়ত কখন ধর্তব্য হবে
১. যাকাতের নিয়ত আদায়ের সময় বা আদায়ের অংশ পরিমাণ মাল পৃথক করার সময় করা জরুরি ।
২. নিয়ত ছাড়া যাকাত প্রদান কালে সেই মাল যাকাত গ্রহীতার কাছে বিদ্যমান থাকা পর্যন্ত নিয়ত গ্রহণযোগ্য হবে, অন্যথায় আদায় হবে না ।
৩. অন্তরে যাকাতের নিয়ত রেখে মুখে হাদীয়া বা অন্য কিছু বলে যাকাত দিলে আদায় হয়ে যাবে ।
যাকাত আদায় করবে কখন
১. জীবনে যে কোনো সময় যাকাত আদায় করতে পারে । যেহেতু যাকাতের বিধান পুরো জীবনের সাথে সম্পৃক্ত ।
২. যাকাত আদায়ে বিলম্ব করে এক পর্যায়ে প্রদানকারী অসুস্থ হয়ে গেলে ইচ্ছা করলে সে এই যাকাত আদায়ের জন্য ঋণ নিতে পারে । তবে উক্ত ব্যক্তির সেই ঋণ পরিশোধে সক্ষম হওয়ার প্রবল ধারণা থাকতে হবে ।
যাকাত কাকে দিবে
যাকাত দেয়া যাবে মুসলিম দরিদ্র, নিঃস্ব, কাজে অক্ষম, অভাবী, ঋণগ্রস্ত ও মুসাফির ব্যক্তিকে । তবে গরীব আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, অধিক দীনদার ব্যক্তিবর্গ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যাকাত লাভের উপযুক্ত । অবশ্য নিজের উর্ধ্বতন আত্মীয় ( পিতা-মাতা, দাদা-দাদী ) অধঃস্তন আত্মীয় (সন্তান, নাতী-নাতনী ), নিজামী, ধনী বা অমুসলিম ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া যাবে না । কোনো প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ কাজ বা জনসেবার কাজে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে না ।
স্বর্ণ ও রৌপ্যের যাকাতের হিসাব
মনে করি,
বর্তমান বাজারে ১ তোলা রূপার দাম = ১২০০ টাকা
৫২.৫০ তোলা রূপার দাম = ১২০০x৫২.৫০
= ৬৩,০০০ টাকা
মনে করি,
বর্তমান বাজারে ১ ভরি স্বর্ণের দাম = ৪৮০০০ টাকা
৭.৫০ ভরি স্বর্ণের দাম = ৪৮০০০ x ৭.৫০
= ৩,৬০০০০ টাকা
অর্থাৎ সর্বনিম্ন নেসাবের মালিক রূপা হিসেবে ৬৩,০০০ হাজার টাকা এবং স্বর্ণের হিসেবে ৩,৬০,০০০ টাকা হলে ঐ ব্যক্তির উপর যাকাত দেয়া ফরয ।
যে সব কারণে যাকাত ওয়াজিব হয় না
১. হারাম মালে যাকাত ওয়াজিব হয় না । বরং সম্পূর্ণ মাল সওয়াবের নিয়ত ব্যতীত সদকা করে দেয়া ওয়াজিব ।
২. হারাম মাল দ্বারা যাকাত আদায় করা যায় না ।
৩. যাকাতের মাল বর্ধনশীল না হলে । আর তা বর্ধনশীল হয় উৎপত্তিগতভাবে । যেমন স্বর্ণ রৌপ্য, নগদ টাকা । অথবা মানুষ কৃত্রিমভাবে প্রক্রিয়াশীল করার দ্বারা । যেমন ব্যবসায় খাটানো সম্পদ ।
৪. নেসাব পরিমাণ মালে ঋণ থাকলে ।
৫. যাকাত গণনা বর্ষের মাঝামাঝি সময়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়লে ।
৬. ঋণগ্রহীতা সারা বছর ঋণকে অস্বীকার করে আসলে সে অবস্থায় ঋণদাতার কাছে যদি কোনো প্রমাণ বিদ্যমান না থাকে ।
৭. নেসাব পরিমাণ মাল বন্ধক রাখলে । বন্ধক গ্রহীতা ও বন্ধকদাতা কারো উপর যাকাত আসবে না ।
৮. বহু বছরের হারিয়ে যাওয়া বা সমুদ্রে পড়ে যাওয়া মাল ফিরে পেলে ।
৯. মরুভূমিতে মাল পুঁতে রেখে স্থান ভুলে গেলে । ( তবে আপন গৃহে বা নিজ বাড়িতে পুঁতে রেখে স্থান ভুলে গেলে যাকাত রহিত হবে না । )
১০. নেসাবের উপর পূর্ণ এক বছর অতিক্রম করার পর মাল ধ্বংস হয়ে গেলে যাকাত আসবে না । তদুপরি সমস্ত মাল সদকা করে দিলেও।
0 মন্তব্যসমূহ